নবজাতক শিশুর যত্নে ডায়পার ব্যবহার করা আধুনিক অভিভাবকদের জন্য একটি সাধারণ এবং সুবিধাজনক পদ্ধতি। তবে জন্মের পর থেকেই ডায়পার ব্যবহারের বিষয়ে অনেকের মধ্যে নানা প্রশ্ন থাকে। ডায়পার ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই রয়েছে, এবং সেগুলো মাথায় রেখে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়পার পরানোর সুবিধা
সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী: নবজাতকের জন্য ডায়পার ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী। কাপড় বদলানোর ঝামেলা এড়িয়ে ডায়পার খুব দ্রুত বদলানো যায়, যা অভিভাবকদের জন্য বিশেষত রাতে বা বাইরে থাকার সময় আরামদায়ক।
নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা সহজ: ডায়পার ব্যবহারে নবজাতকের মল ও মূত্র দ্রুত এবং সঠিকভাবে শোষিত হয়, ফলে শিশুর পোশাক, বিছানা, এবং আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকে। এটি বিশেষত বাইরে থাকাকালীন বা ঘরের বাইরে ভ্রমণের সময় উপকারী।
শিশুর আরাম: উন্নতমানের ডায়পার শিশুর জন্য আরামদায়ক হয়, কারণ এগুলো সাধারণত নরম এবং শোষণক্ষম উপাদানে তৈরি, যা শিশুর ত্বককে শুষ্ক ও আরামদায়ক রাখে।
রাতের ঘুম উন্নত করা: ডায়পার ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুর ঘুমের সময় মূত্র নিঃসরণের কারণে তাকে ঘন ঘন বিরক্ত করা লাগবে না। এতে শিশুর রাতের ঘুম উন্নত হয় এবং ঘুমের সময় দীর্ঘায়িত হয়।
ডায়পার পরানোর অসুবিধা
ডায়পার র্যাশ: দীর্ঘ সময় ধরে ডায়পার পরানোর ফলে শিশুর ত্বকে ডায়পার র্যাশ হতে পারে। এটি শিশুর কোমল ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি, এবং সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ত্বকের এই সমস্যা মূলত অতিরিক্ত আর্দ্রতা বা ডায়পার বদলানোর ক্ষেত্রে অবহেলার কারণে হয়ে থাকে।
বাতাস চলাচলের অভাব: ডায়পার ত্বকের উপর একটি আচ্ছাদন তৈরি করে, যা ত্বকে যথেষ্ট বাতাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এর ফলে শিশুর ত্বক আর্দ্র হয়ে থাকতে পারে, যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
ব্যয়বহুল হতে পারে: ডায়পারের নিয়মিত ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল হতে পারে। উন্নতমানের ডায়পার এবং ফ্রিকোয়েন্ট পরিবর্তন করা খরচ বাড়ায়।
ডায়পার ব্যবহারে করণীয় এবং সচেতনতা
নিয়মিত পরিবর্তন: নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে ডায়পার খুব ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হবে। প্রতি ৬-৮ ঘণ্টা পরপর, এবং যদি শিশুর মল ত্যাগ হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ডায়পার পরিবর্তন করা জরুরি। এতে ত্বকে আর্দ্রতা জমে না এবং ডায়পার র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ত্বক পরিষ্কার রাখা: ডায়পার বদলানোর সময় শিশুর ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। বেবি ওয়াইপস দিয়ে পরিষ্কার করে, এরপর ভালোভাবে শুকিয়ে নতুন ডায়পার পরাতে হবে। এভাবে শিশুর ত্বক সুস্থ ও পরিষ্কার থাকবে।
বাতাস লাগতে দেয়া: প্রতিদিন কিছু সময় শিশুর ত্বকে ডায়পার ছাড়া রাখা উচিত, যাতে ত্বকে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে। এটি ত্বককে শুষ্ক ও র্যাশমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
সঠিক আকারের ডায়পার ব্যবহার: নবজাতকের ত্বকের আরাম এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য শিশুর শরীরের মাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সঠিক আকারের ডায়পার ব্যবহার করা উচিত। খুব টাইট ডায়পার ত্বকে চাপে সমস্যা তৈরি করতে পারে, আর খুব ঢিলা ডায়পার লিকেজের কারণ হতে পারে।
ডায়পার র্যাশ ক্রিম ব্যবহার: প্রতিবার ডায়পার বদলানোর সময় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ডায়পার র্যাশ ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন, যা ত্বকে একটি সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি করবে এবং ত্বককে র্যাশের হাত থেকে রক্ষা করবে।
নবজাতক শিশুকে ডায়পার পরানো সুবিধাজনক হলেও কিছু অসুবিধা রয়েছে যা অভিভাবকদের মাথায় রাখতে হবে। নিয়মিত পরিবর্তন, ত্বকের সঠিক যত্ন এবং মানসম্পন্ন ডায়পার ব্যবহারের মাধ্যমে এসব সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব। শিশুর আরাম ও স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ রেখে ডায়পার ব্যবহার করা হলে তা নবজাতকের জন্য নিরাপদ এবং সুবিধাজনক হতে পারে।